পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার কথা-৩

লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

এই সিরিজের অন্য পোস্ট গুলো পড়তে চাইলে [ ,]

 

আমার আগের পোস্টে ফার্মিয়ান কণাদের (কোয়ার্ক এবং লেপ্টোন) কথা বলেছিলাম এদের সবারই স্পিন সংখ্যা কিন্তু ১/২ , তাহলে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসবে ‘অড হাফ ইন্টিজার (১/২)স্পিনযুক্ত কণার ’কথা বলার দরকার ছিল কি ? শুধু ‘হাফ ইন্টিজার’ বললেই হতো । আসলে আরেক অর্থে ফার্মিয়ান কণারা দুই রকম ।

• মৌলিক ফার্মিয়ান কণা এবং

• যৌগিক ফার্মিয়ান কণা ।

আর এই যৌগিক ফার্মিয়ান কণাদের জন্যই শুধু ‘হাফ ইন্টিজার’ না বলে ‘অড হাফ ইন্টিজার (১/২) স্পিনযুক্ত কণা ১/২ , ৩/২ ….) বলতে হচ্ছে । এই পর্যন্ত যত গুলো ফার্মিয়ান কণাদের সাথে পরিচয় হয়েছে এরা সবাই মৌলিক ফার্মিয়ান কণা ।

 তাহলে যৌগিক ফার্মিয়ান কণা কি ?

এই উত্তর টা দেওয়ার আগে আমি একটু অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাই । দুই বা ততোধিক কোয়ার্ক বা প্রতি-কোয়ার্ক মিলে এক ধরণের যৌগিক কণা বা কম্পোজিট পার্টিকেল সৃষ্টি করে । এই যৌগিক কণাদের কে বলা হয় হ্যাড্রন । হ্যাড্রনরা দুইটি পরিবারে বিভক্ত একটি হচ্ছে বেরিয়ন এবং অন্যটি হচ্ছে মেসন । হ্যাড্রন সম্পর্কে এতোটুকু আমরা মনে রাখি…

এইবার উপরোক্ত প্রশ্নের (তাহলে যৌগিক ফার্মিয়ান কণা কি? ) উত্তরে আসি । তিনটি মৌলিক ফার্মিয়ান কণা মিলে যৌগিক ফার্মিয়ান কণা সৃষ্টি হয় যদি আরো একটু ভালভাবে বলি তাহলে বলতে হয় , তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে যৌগিক ফার্মিয়ান কণার সৃষ্টি হয় । পদার্থবিদরা এই যৌগিক ফার্মিয়ান কণাদের নাম দিয়েছেন বেরিয়ন (আমাদের আগেই কিন্তু হ্যাড্রন কণার সাথে পরিচয় হয়েছে ) । এই যৌগিক কণাদের বা বেরিয়নদের কেন ফার্মিয়ান কণা বলা হয় ? এরা যৌগিক হলেও ফার্মি ডিরাক-সংখ্যায়ন মেনে চলে আর তাই এদের ফার্মিয়ান কণা বলা হয় ।

 

চিত্র-১ : প্রোটন এবং নিউট্রন

 

তাহলে বলা যায় বেরিয়ন হচ্ছে তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত যৌগিক SUBATOMIC কণা ।  প্রোটন এবং নিউট্রন (চিত্র-১) হচ্ছে সব চেয়ে পরিচিত বেরিয়ন কণা । আমরা সবাই জানি এই দুটি কণা পরমাণুর মৌলিক তিনটি কণার দুইটি বাকি একটি হচ্ছে ইলেকট্রন । প্রোটন মূলত দুইটি আপ কোয়ার্ক ও একটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত এবং নিউট্রন দুইটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত এবং এদের উভয়ের স্পিন সংখ্যা ১/২ । এখন কি মনে মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে প্রোটন এবং নিউট্রন এর স্পিন সংখ্যা ১/২ আবার ভরও প্রায় সমান , তাহলে এদের মধ্যে পার্থক্য কি…… ? হ্যাঁ আপনারা ঠিকই ধরেছেন চার্জের  পার্থক্য । আসলে আগে মনে করা হতো দুইটি একি রকম কণা কিন্তু ১৯৩২ সালে নিউট্রন আবিষ্কারের পর এদের পার্থক্য বের হয় । আমরা চাইলে কণা দু’টির চার্জ বের করতে পারি , আপ-কোয়ার্কের চার্জ হচ্ছে +২/৩ আর অন্য দিকে ডাউন-কোয়ার্কের চার্জ হচ্ছে  -১/৩ । তাই প্রোটনের জন্য চার্জ হচ্ছে (২/৩+২/৩-১/৩ = ১) ১ আর নিউট্রনের জন্য চার্জ হচ্ছে (২/৩-১/৩-১/৩ = ০) ০ বা নিউট্রাল ।

এমন আরো কিছু বেরিয়ন হচ্ছে  Ω (স্পিন সংখ্যা ৩/২), Δ+ , Δ ++ , Δ 0  (স্পিন সংখ্যা ৩/২) ইত্যাদি । এই পর্যন্ত ১২০ টির মত বেরিয়ন কণা আবিষ্কৃত হয়েছে । নিচে বেরিয়নের একটি চার্ট দেওয়া হল ।

চিত্র-২ : বেরিয়নের চার্ট ।

বর্তমানে কিছু কিছু কণা পদার্থবিদ Pentaquark নামক Exotic Baryon  কণার কথা বলেন যা কিনা ৪ টি কোয়ার্ক ও একটি প্রতি-কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত যদিও বেশিরভাগ পদার্থবিদরা এর অস্তিত্ব স্বীকার করে না ।

মজা করার জন্য এই ভাবে বললে কেমন হয় ? ফার্মিয়ান কণাদের কিছুটা রাজা রাজা ভাব , তা আবার কিভাবে ? একই রাজ্যে যেমন দুইজন রাজা থাকতে পারে না , ঠিক যেমন একই state এ দুইটা ফার্মিয়ান কণা থাকতে পারে না । কিন্তু একই রাজ্যে , রাজার অনেক সৈন্যসামন্ত থাকতে পারে , আর  এই সৈন্য সামন্তদের সাথে তুলনা করা যায়  বোসন কণাদের । একই state এ একাধিক বোসন কণা থাকতে পারে, সেই কথায় পরে আসি । আবার রাজার শক্তি যেমন এই সৈন্যসামন্ত , ঠিক তদ্রূপ ফার্মিয়ান কণাদের শক্তি বা বল কণা হচ্ছে বোসন কণা । আমার উদাহরণটা হয়তো খূব একটা সুন্দর হলোনা , তবে মনে হল পাঠকদের মনে রাখার জন্য খূব একটা বাজেও না (তবে এই বলে ভাববেন না যে রাজার মত ফার্মিয়ান কণাদের গুরুত্ব বেশি আর বোসন কণাদের গুরুত্ব কম , দরকার হলে আমার উদাহরণটা ভুলে যান ) । যাইহোক এতক্ষণ রাজা মশাই অর্থাৎ ফার্মিয়ান কণাদের নিয়ে বললাম এইবার রাজার শক্তি , বোসন কণা অর্থাৎ রাজার সৈন্য সাম্বন্তদের সাথে পরিচয় হওয়া যাক ।

কোয়ান্টাম মেকানিকস্ অনুযায়ী বোসন কণাদের স্পিন হচ্ছে ০,১,২ ইত্যাদি পূর্ণ সংখ্যা আর আমি আগেই বলেছি যে এদের কে বোসন কণা বলা হয় কারণ এরা বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন মেনে চলে এবং বোসন কণা হচ্ছে বল কণা আর এদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হচ্ছে এরা পাউলির বর্জন নীতি মেনে চলেনা । তাই দুই বা ততোধিক বোসন কণা একই অবস্থায় ( State) অবস্থান করতে পারে অর্থাৎ বল কণা একই সাথে আদান-প্রদান করা যাবে তার কোন সীমা নাই ।

আমরা সাধারনত বস্তু কণার মতো বল কণার অস্তিত্ব অনুধাবন করতে পারি না আর তাই অনেক সময় বল কণা কে ভার্চুয়াল কণাও বলা হয় । তবে বস্তু কণার মতো বল কণারও অস্তিত্ব থাকতে পারে আর তখনি আমরা তাদের কে  তরঙ্গ বলি । জটিল লাগসে ? একটা উদাহরণ দিলে কেমন হয় ? দুইটি ইলেক্ট্রনের মধ্যে যে বৈদ্যুতিক বিকর্ষণ বল আছে তার সৃষ্টি হয় অবাস্তব ফোটন কণার (বোসন কণাদের মধ্যে ফোটন কণা হচ্ছে একটি ) বিনিময়ের মাধ্যমে যা আমরা কখনোই সনাক্ত করতে পারি না । কিন্তু যখন একটি ইলেক্ট্রন অপর একটি ইলেক্ট্রন কে অতিক্রম করে তখন বাস্তব ফোটন কণা নিঃসৃত হতে পারে যাদের কে আমরা আলোক কণা হিসেবে সনাক্ত করি ।

 

চলবে ………

 

লেখাটি 731-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. ভাই রাজার গল্পটা কাজে দিয়েছে। এরকম গল্প থাকলে মন্দ হয় না। কণাগুলো যেহেতু আমরা চোখে দেখি না, তাই কল্পনা করতে কষ্ট হয়। বিভিন্ন কণার আন্তসম্পর্ক গুলিয়ে যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি কণাপদার্থবিদ্যার অআকখ বুঝতে চাই। সপ্তাহে একটা ক্লাস নিন। এর বেশি হলে মাথায় একটু চাপ পড়ে যায়। ওই দিকে দীপেন’দা আপেক্ষিকতার ক্লাস নিচ্ছেন। আপনারা পরীক্ষা চাইলে বিপদে পড়ে যাবো 🙁

    সিরিয়াসলি এই বিষয়টি কভার দিন। আগামী বইমেলাতে এই পোস্টগুলোকে বড় করে একটা বই বের করুন। বই বের করার লক্ষ্য থাকলে লেখালেখিগুলো সিরিয়াস একটা জায়গায় যাবে। আপনার লেখাগুলো আর্কাইভে যাওয়ার পর কয়জনই বা পড়বে বলুন …

  2. আরাফাত@……ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্য…
    আসলে আমি চেষ্টা করছি এই টপিক টাকে গাণিতিক টার্ম ব্যবহার না করে যত সহজ ভাবে উপস্থাপন করা যায় । জানিনা আমি কত টূকূ সফল হব …

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers